Jonayed Hossain

credit, bank, money-4516068.jpg

ব্যাংক ব্যাবসা ও ই-কমার্স ব্যবসা; পদ্ধতি ও পার্থক্য..

-মোঃ জোনায়েদ হোসেন

ব্যাংক কীভাবে ব্যবসা করে তা মোটামুটি আমরা সবাই ই জানি। তবু একটু সহজ করে বলি, ধরুন, একশো জন গ্রাহক বিভিন্ন স্কিম এ (সঞ্চয়ী, চলতি, ডিপিএস, মেয়াদী ইত্যাদি) ব্যাংকে টাকা জমা রাখলো। এই টাকার একটা অংশ ব্যাংক লোন দিবে, একটা অংশ বিভিন্ন খাতে বিনিয়োগ করবে আর কিছু অংশ নগদ রাখবে দৈনিক গ্রাহকের চাহিদা মেটানোর জন্য। লোন এবং বিনিয়োগ থেকে যে মুনাফা বা লাভ পাবে তা থেকে যারা ব্যাংকে টাকা জমা রেখেছে তারা লাভ পাবে, ব্যাংকের কর্মচারীদের বেতন দিবে, আনুষাঙ্গিক খরচ করবে এরপর বাকি অংশ যা থাকবে তা ব্যাংকের নীট লাভ।

মনে করি, একটা ব্যাংকে গ্রাহক বিভিন্ন একাউন্টে ১০০ কোটি টাকা রেখেছে। এই টাকা থেকে ব্যাংক ৬০ কোটি টাকা লোন দিয়েছে এবং ২০ কোটি টাকা বিভিন্ন খাতে বিনিয়োগ করেছে, বাকি ২০ কোটি টাকা নগদে রেখে দিয়েছে লেনদেন ঠিক রাখার জন্য। বছর শেষে দেখলো, লোন ৬০ কোটি টাকা থেকে মুনাফা পেয়েছে ১০ কোটি টাকা এবং ২০ কোটি বিনিয়োগ থেকে লাভ পেয়েছে ২ কোটি টাকা। তাহলে, মোট লাভ ১০+২= ১২ কোটি।

মনে করি, এখান থেকে যারা টাকা জমা রেখেছে তাদের মুনাফা দিল ৭ কোটি টাকা, কর্মচারীদের বেতন ও অন্যান্য খরচ হলো ৩ কোটি টাকা; তাহলে মোট খরচ ১০ কোটি টাকা। ব্যাংকের নীট লাভ ১২-১০= ২ কোটি টাকা। এটাই হলো ব্যাংক ব্যাবসা, কঠিন কিছু না।

এখন আমার মূল আলোচনায় যাই, ব্যাংক গ্রাহকের যে টাকাগুলো বিনিয়োগ করে, গ্রাহক যদি সে টাকা ফেরত চায় দিবে কীভাবে?

এর উত্তর হলো, সব গ্রাহক যদি একসাথে টাকা চায় তাহলে ব্যাংক বিলীন বা দেউলিয়া হয়ে যাবে। এমনকি অর্ধেক বা তিনভাগের একভাগ গ্রাহকও যদি এক সাথে টাকা তুলতে চায় তাহলে ব্যাংক দেউলিয়া হয়ে যাবে।

তাহলে ব্যাংক কীভাবে ব্যাবসা করে?

ব্যাংকের সাধারণত লক্ষ লক্ষ গ্রাহক থাকে। লক্ষ লক্ষ গ্রাহকের মধ্যে কতজন টাকা নিবে তার একটা সাধারণ হিসাব থাকে। সাধারণত ১০-১৫% টাকা ব্যাংকগুলো রেখে দেয়। এটা দিয়েই গ্রাহকের চাহিদা মিটে যায়। এটার জন্য অবশ্য নির্দিষ্ট আইন আছে। CRR- Cash Reserve Ratio এবং SLR – Statutory Liquidity Ratio নামে দুটি টার্ম আছে। বর্তমান CRR ৪% এবং SLR ১৩%। এর মানে হলো প্রতি ১০০ টাকা আমানতের বিপরীতে ব্যাংকগুলোকে ৪ টাকা নগদ টাকায় এবং মোট ১৩ টাকা অন্যান্য ফর্মে ধরে রাখতে হবে। এটা কেন্দ্রীয় ব্যাংক ঠিক করে দেয় এবং তদারকি করে।

এবার আসি ই-কমার্স বা অনলাইন বিজনেস এর কথায়। অনলাইন বিজনেস হলো একেবারে সাধারণ একটা মুদি দোকান বা সুপার শপের মতো। পার্থক্য শুধু ক্রেতা ঘরে বসে পণ্যটি ক্রয় করে।

অনলাইন ব্যবসার ব্যবসায়ীর লাভ হবে একেবারে সাধারণ হিসেবে। সে সরবরাহকারী থেকে পণ্য কিনে তার চেয়ে অধিক দামে বিক্রি করবে। দুই দামের মধ্যবর্তী অংক থেকে সে তার যাবতীয় খরচ মেটাবে এবং লাভ করবে।

মনে করি, ওয়ালটন কোম্পানি ফ্রিজ খুচরা বিক্রি করে ২৫ হাজার করে। দারাজ একসাথে নিবে এজন্য ১০০ ফ্রিজ কিনলো ২০ হাজার করে। তাহলে সে ফ্রিজ কিনলো ২০ লাখ টাকার। এবং সে অনলাইনে বিভিন্ন অফার দিবে ২২ হাজার, ২৩ হাজার বা ২৫ হাজার দামে ওয়ালটন ফ্রিজ। গ্রাহক সবগুলো ফ্রিজ কিনলো। মোট বিক্রি ২৫ লাখ। লাভ ৫ লাখ। এখান থেকে যদি বিভিন্ন খরচ ৪ লাখ বাদ যায় নীট লাভ থাকবে ১ লাখ।

গ্রাহক একটি পণ্য ক্রয়ের সাথে সাথেই তার পণ্য বুঝে পাবে। এখানে সাথে সাথে মানে যৌক্তিক সময়ে (১-১০ দিন হতে পারে)। যৌক্তিক সময়ে যতটুকু পণ্য সরবরাহের ক্যাপাসিটি আছে প্রতিষ্ঠান ততটুকুই পণ্য বিক্রি করবে। এখানে ব্যাংক ব্যবসার মতো একজনের টাকা নিয়ে আরেকজনকে পণ্য দেওয়ায় কোন সুযোগ নেই। এটা ক্রয়-বিক্রয়, বিনিয়োগ না।

এখানে এক গ্রাহকের টাকায় আরেক গ্রাহক পণ্য পাওয়ার কোন সুযোগ নেই। যদি পায় তাহলে দিনে দিনে যে বিশাল গ্যাপ তৈরি হবে তার পরিণতি যত দিন যাবে তত খারাপ হবে। ব্যাংকের ক্ষেত্রে এটা হয়না, কারণ ব্যাংক ঋণ দিচ্ছে, মুনাফা করছে। এবং ব্যাংকের এটা করার অনুমোদন আছে, এটাই ব্যাংকের ব্যবসা পদ্ধতি। কিন্তু অনলাইন ব্যবসায় এটা করা বড় ধরনের আইনের লঙ্ঘন।

সব কথার মূল কথা, অনলাইন বিজনেসটা কী এটা বুঝলেই হয়। অনলাইন বিজনেস হলো ইন্টারনেট এ দোকানদারি। খরচ কম পরলে তুলনামূলক কম দামে দিতে পারে কিন্তু বড় একটা সংখ্যক গ্রাহকের টাকা ধরে রেখে এই বিজনেস করার কোন সুযোগ নেই। এটা করলে আজ হোক, কাল হোক বিপর্যয় ঘটবেই।

Share this Article:

Facebook
Twitter
LinkedIn