ছবিটায় রেখার উপর একটা ছোট্ট উজ্জ্বল বিন্দু দেখছেন না?
এটা হলো আমাদের পৃথিবী। ভাবছেন, খুব দূরে থেকে তোলা হয়েছে এজন্য এতো ছোট দেখাচ্ছে?
নারে ভাই! মাত্র ৬০০ কোটি কিলোমিটার দূর থেকে তোলা।
সূর্য থেকে আমাদের দূরত্ব ১৫ কোটি কিলোমিটার। তারমানে সূর্য থেকে আমাদের যে দূরত্ব তার থেকে মাত্র ৪০ গুণ দূরে থেকে তোলা হয়েছে ছবিটা।
মজার বিষয় খেয়াল করেছেন? সূর্য থেকে পৃথিবীর দিকে তাকালে পৃথিবীকে হয়তো বিন্দুটির ৪০ গুণ বড় দেখাবে!
যাইহোক, সূর্য থেকে পৃথিবীতে আলো আসতে সময় লাগে মাত্র ৮ মিনিট ২০ সেকেন্ড।
তার মানে যেখান থেকে এই ছবিটি তোলা হয়েছে পৃথিবী থেকে সেখানের দূরত্ব হলো মাত্র ৩৩৪ মিনিটে আলো যতটুকু দূরে যায় ততটুকু। তাহলে সহজ করে বললে, ৩৩৪ মিনিটে আলো যতটুকু দূরে যায় ততটুকু দূর থেকে পৃথিবীকে এই সাইজের মনে হয়!
🙂এবার একটু চিন্তা করেন, আলো একদিনে কতদূর যায়? একমাসে? এক বছরে? এক কোটি বছরে? 😄আমাদের ছোট্ট সূর্যটা হলো ছায়াপথ বা Milky Way গ্যালাক্সির একটা নক্ষত্র।
এরকম ১০ হাজার কোটি সূর্য আছে আমাদের গ্যালাক্সিতেই। আর আমাদের গ্যালাক্সির ব্যাস হলো ১ লক্ষ ৭ হাজার ৬০০ আলোকবর্ষ।
অর্থাৎ আলো আমাদের গ্যালাক্সির এক মাথা থেকে আরেক মাথায় যেতে সময় নেয় ১ লক্ষ ৭ হাজার ৬০০ বছর! 🙂এই মিল্কি ওয়ে গ্যালাক্সি হলো মহাবিশ্বের মিডিয়াম সাইজের গ্যালাক্সি। এর চেয়ে কোটি কোটি গুণ বড় কোটি কোটি গ্যালাক্সি আছে মহাকাশে!
যাইহোক, প্রথম ছবিটায় ফেরত যাই। এই ছবিটা কিন্তু একেবারে রিয়েল ছবি। পৃথিবী থেকে পাঠানো ক্যামেরায় তোলা।
এই ছবিতে থাকা মহাকাশযান ভয়েজার ১ থেকে ছবিটি তোলা হয় ১৯৯০ সালের ১৪ ফেব্রুয়ারি। তখন এই ভয়েজার ১ পৃথিবী থেকে ৬০০ কোটি কিলোমিটার দূরে ছিল।
ভয়েজার ১ হলো মানুষের তৈরি কোন জিনিস যেটা পৃথিবীর সবচেয়ে দূরে আছে এখনো। এটি ১৯৭৭ সালের ৫ সেপ্টেম্বর মহাকাশে পাঠানো হয়। ইতোমধ্যে এটি আমাদের প্রতিবেশী/বড় ভাই গ্রহ বৃহস্পতি ও শনি পর্যবেক্ষণ করে হাজার হাজার চমৎকার ছবি পাঠিয়েছে।
এরপর এটি ক্রমশ সূর্য থেকে দূরে যেতে যেতে ইতোমধ্যে সূর্যের আকর্ষণ শক্তি অতিক্রম করে সূর্যের সীমার বাহিরে চলে গেছে (প্রায় ২৪০০ কোটি কিলোমিটার দূরে)।
এখন এটি যেখানে আছে তাকে বলা হয় ইন্টারস্টেলার স্পেস। মানে আমাদের সূর্য ও আমাদের পাশের সূর্যের মধ্যবর্তী স্থানে অনেকটা অন্ধকার জায়গায়।
প্রতি সেকেন্ডে ১৫ কিলোমিটার গতিতে এগিয়ে চলেছে মহাকাশযানটি। ২০২৫ এ এর জ্বালানি শেষ হয়ে যাওয়ার কথা। এরপর হয়তো ভয়েজার ১ থেকে আর সিগন্যাল আমরা পাবো না। বিজ্ঞানিরা জ্বালানি কম ব্যবহার করে (এখান থেকে সিগন্যাল পাঠিয়ে কিছু ইউনিট বন্ধ রেখে) একে আরো কিছু সময় সচল রাখার চেষ্টা করছে।
আরেকটি মজার তথ্য দিয়ে শেষ করছি,
এই ছবিটি দেখুন। এটি স্বর্ণের প্লেটে বিভিন্ন তথ্য উপাত্ত, ভয়েস, কমান্ড দিয়ে ভয়েজার ১ এ দিয়ে দেওয়া হয়েছে। পৃথিবীর ৫৪ টি ভাষায় বিভিন্ন কিছু দিয়ে এটি পাঠানো হয়েছে।
এতে বাংলা ভাষায় আছে, “নমস্কার বিশ্বে শান্তি হোক।”পৃথিবীর বাহিরে কোন বুদ্ধিমান প্রাণী যদি থেকে থাকে তারা যাতে আমাদের সম্পর্ক জানতে পারে সেজন্য এটি দেওয়া হয়েছে।সবার জন্য শুভকামনা।
হ্যাপি লার্নিং 🙂
– Jonayed Hossain