money, dollars, success-1428594.jpg

রিজার্ভ বা ফরেন রিজার্ভ ( Foreign Reserve or Foreign Exchange Reserve or ForEx Reserve) কী, কেন, কীভাবে রাখে?

-মোঃ জোনায়েদ হোসেন

রিজার্ভ এর বাংলা অর্থ সঞ্চিতি বা সঞ্চয়। কঠিন এ না যাই, সহজ করেই বলি।

ফরেইন রিজার্ভ বলতে বিদেশের সাথে লেনদেন যোগ্য টাকা বা সম্পদকে বুঝায়। মানে বিদেশীরা দ্রব্য বা সেবার বিনিময়ে যা নিতে রাজি আছে তা। ডলার, ইউরো, রুপী, স্বর্ণ, ইত্যাদি যা কিছু দিয়ে বিদেশের সাথে লেনদেন করা যাবে তা ই ফরেইন রিজার্ভ। এর মোট পরিমাণকে একটি দেশের ফরেইন রিজার্ভ বলে।

আমাদের মুদ্রার নাম টাকা। আমরা চাইলে বিলিয়ন, বিলিয়ন টাকা ছাপাতে পারি। কিন্তু বিদেশীরা এই টাকা নিবে না। আমরা তেল আমদানির বিপরীতে যদি টাকা দিতে চাই ওরা মানবে না, বলবে ডলার বা ইউরো দাও। স্বর্ণ দিলেও মানবে। সেজন্য অন্যদের গ্রহণযোগ্য মুদ্রায় রিজার্ভ রাখতে হয়।

রিজার্ভ রাখা হয় বিদেশ থেকে আমদানি করার জন্য, বিদেশের ঋণ পরিশোধ করার জন্য বা বিদেশকে ঋণ বা সাহায্য দেওয়ার জন্য। রিজার্ভ এর প্রধান তিনটি কাজ হলো-

১. আমদানি ব্যয় মেটানো

২. মুদ্রার মান নিয়ন্ত্রণ করা (টাকার মান বাড়ে কমে কীভাবে এটা নিয়ে লিখবো সামনে। )

৩. রাষ্ট্রের জনগণ ও বিদেশীদের আস্থা ঠিক রাখা

ধরেন, আপনি একটা ফিল্টার আনাবেন চায়না থেকে ২০০ ডলার মূল্যের। আপনি সোনালী ব্যাংকে গিয়ে এলসি খুলে টাকা জমা দিয়েছেন ২০০ ডলার হিসাব করে। সোনালী ব্যাংক থেকে টাকাটা বাংলাদেশ ব্যাংক এ যাবে আর বাংলাদেশ ব্যাংক থেকে ২০০ ডলার বিদেশে চলে যাবে। এভাবে সকল আমদানির খরচ বা যেকোনো উদ্দেশ্যে বিদেশে টাকা পাঠালে সেটা ডলার হিসেবে বাংলাদেশ ব্যাংকের মাধ্যমে যাবে। অর্থাৎ সকল বিদেশি আদান-প্রদানের চুরান্ত লেনদেন হয় বাংলাদেশ ব্যাংকের মাধ্যমে।

একইভাবে ধরেন, একজন প্রবাসী সৌদি আরব থেকে ২০০০ রিয়াল বা সমপরিমাণ ধরে ৫০০ ডলার পাঠালো ইসলামী ব্যাংকের একটা একাউন্টে। ডলারটা ঐ দেশের ব্যাংক থেকে আসবে বাংলাদেশ ব্যাংকে। বাংলাদেশ ব্যাংক ডলার রেখে দিয়ে সমপরিমাণ টাকা ইসলামী ব্যাংককে দিবে, ইসলামী ব্যাংকের সংশ্লিষ্ট শাখা গ্রাহককে ঐ টাকাটা দিয়ে দিবে। তাহলে বুঝেছেন, রেমিট্যান্স আসলে রিজার্ভ বাড়ে কীভাবে?

রেমিট্যান্স ছাড়াও সকল রপ্তানি আয়ের ক্ষেত্রেও একই ঘটনা ঘটে। আপনি বিদেশে ইলিশ রপ্তানি করলে বিদেশ থেকে ডলার আসবে বাংলাদেশ ব্যাংকে। বাংলাদেশ ব্যাংক ডলার রেখে আপনাকে টাকা দিয়ে দিবে।

আমদানি বেড়ে গেলে বাংলাদেশ ব্যাংককে ডলার বেশি দিয়ে দিতে হয়, রিজার্ভ কমে। রপ্তানি বেশি হলে, রেমিট্যান্স বেশি আসলে বাংলাদেশ ব্যাংকে ডলার বেশি জমা হয়, রিজার্ভ বাড়ে।

তাহলে আমরা বলতে পারি, রিজার্ভ মানে বিদেশী মুদ্রা বা সম্পদ যেটা বিদেশীরা বিনিময় হিসেবে আবার নিবে। বিদেশের সাথে সকল লেনদেন হয় ( আমদানি -রপ্তানি) বাংলাদেশ ব্যাংকের মাধ্যমে। এজন্য বাংলাদেশ ব্যাংক জানে তার কাছে কী পরিমাণ বৈদেশিক মুদ্রা বা বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ আছে।

এবার হয়তো প্রশ্ন হতে পারে রিজার্ভ শুধু ডলারে রাখে? – উত্তর হলো না। ডলার, ইউরো, ইউয়ান অনেক মুদ্রাতেই রাখে। ডলারে বেশি রাখে। এর তিনটা কারণ

১. ডলারের দাম মোটামুটি স্থিতিশীল ( ডলারের বিপরীতে বিভিন্ন মুদ্রার দাম বেশি উঠানামা করে)

২. আমেরিকার বিশ্বব্যাপী প্রভাব এবং ডলার এর গ্রহণযোগ্যতা

৩. বিশ্বব্যাংক, আইএমএফসহ বেশিরভাগ আর্থিক প্রতিষ্ঠান আমেরিকা ঘেঁষা

এজন্য ডলারেই বেশি রাখে। তবে সবটা কোন দেশই ডলারে রাখে না। যেমনঃ বাংলাদেশও ডলারের পাশাপাশি স্বর্ণ ও অন্য কিছু মুদ্রায় রাখে।

তাহলে সবসময় বলে কেন রিজার্ভ ৪০ বিলিয়ন ডলার, ৪৫ বিলিয়ন ডলার ইত্যাদি? – হিসাবটা ডলারে রাখে এজন্য। ধরেন, ৪৫ বিলিয়ন ডলারের মধ্যে হয়তো ১০ বিলিয়ন ডলারের স্বর্ণ এবং ৫ বিলিয়ন ডলারের ইউরো আছে (উদাহরণ)।

রিজার্ভ কোথায় রাখে? – রিজার্ভ কিছু অংশ দেশে বাংলাদেশ ব্যাংকের ভল্টে ( বিদেশি কাগুজে মুদ্রায় বা স্বর্ণে), কিছু অংশ বিদেশের ব্যাংকে রাখে। বাংলাদেশ ব্যাংকের চুরি হওয়া রিজার্ভ কিন্তু আমেরিকার ফেডারেল ব্যাংক থেকে চুরি হয়েছিল। ঐ ব্যাংকে বাংলাদেশ ব্যাংকের একাউন্ট আছে। (হ্যাকাররা বাংলাদেশ ব্যাংকের ঢাকা অফিসের কম্পিউটার হ্যাক করে ওখান থেকে অনলাইনে লেনদেন করে যুক্তরাষ্ট্রের ফেডারেল ব্যাংক থেকে ফিলিপাইনে টাকা নিয়ে যায়।)

সাধারণত কোন দেশের তিন থেকে ছয় মাসের আমদানি ব্যয় নির্বাহ করার জন্য রিজার্ভ থাকলে সেটাকে নিরাপদ বলা হয়। বিভিন্ন গবেষণায় বলা হয় বাংলাদেশের বর্তমান রিজার্ভ ৪০ বিলিয়ন ডলার দিয়ে আট থেকে বারো মাসের আমদানি ব্যয় মেটানো সম্ভব। ব্যয় মেটানো মানে এই রিজার্ভ শেষ হয়ে যাওয়া নয়, এই সময়ে ডলার আসবেও, যাবেও। মানে একেবারে রপ্তানি না হলে বা রেমিটেন্স না আসলে ৮-১২ মাস চলা যাবে।

বিশ্ব বাজারে তেল, গ্যাস বা খাদ্যপন্যের দাম যত বাড়বে আমাদের আমদানি খরচ তত বাড়বে, রিজার্ভের উপর চাপ বাড়বে। লেখাটা আর বড় করছি না। আরেকদিন আরো লিখবো।

সবার জন্য শুভকামনা 🙂

হ্যাপি লার্নিং

Share this Article:

Facebook
Twitter
LinkedIn