আজ ৫ ডিসেম্বর, গণতন্ত্রের মানসপুত্র হোসেন শহীদ সোহরাওয়ার্দীর মৃত্যুবার্ষিকী।
এ দিনটির আলাদা একটি তাৎপর্য আছে। ১৯৬৯ সালের এই দিনে হোসেন শহীদ সোহরাওয়ার্দীর মৃত্যুবার্ষিকীতে আয়োজিত এক অনুষ্ঠানে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বাংলাদেশের নাম রাখেন! বঙ্গবন্ধু বলেন – আজ থেকে পূর্ব পাকিস্তানের নাম হবে ‘বাংলাদেশ’।
হোসেন শহীদ সোহরাওয়ার্দী বাঙালি জাতির এক অবিচ্ছেদ্য অংশ। তাঁকে ছাড়া বাঙালির ইতিহাস লেখা প্রায় অসম্ভব।
তিনি ছিলেন যুক্ত বাংলার সর্বশেষ প্রধানমন্ত্রী এবং পাকিস্তানের সাবেক প্রধানমন্ত্রী। বর্ণাঢ্য রাজনৈতিক জীবনে তাঁর অর্জন অসামান্য।
মানুষের অধিকারের জন্য আপোষহীন এক মহান চরিত্র ছিলেন তিনি।
আমার এ লেখা অবশ্য নেতা সোহরাওয়ার্দীকে নিয়ে না; ব্যক্তি সোহরাওয়ার্দীকে নিয়ে। অজানা বহু কিছু জানবেন আশা করি।
হোসেন শহীদ সোহরাওয়ার্দী জন্মেছেন ১৮৯২ সালে পশ্চিমবঙ্গের মেদিনীপুরে।
পড়াশোনা করেছেন কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ে আরবি ভাষা ও সাহিত্যে (স্নাতকোত্তর), এরপর যুক্তরাজ্যের অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয় থেকে আবার বিজ্ঞানে স্নাতক এবং শেষে আইনে ব্যাচেলর অফ সিভিল ল এবং সবশেষ ১৯১৮ সালে বার এট ল ডিগ্রী অর্জন করেন।
Follow me on Facebook–
তাঁর বাবা ছিলেন বিখ্যাত আইনজ্ঞ স্যার জাহিদ সোহরাওয়ার্দী (ব্রিটিশ রাণী থেকে নাইটহুড উপাধীপ্রাপ্ত),
মা ছিলেন বিখ্যাত বাঙালি লেখিকা, সমাজ সংস্কারক, প্রথম ভারতীয় সিনিয়র ক্যাম্ব্রিজ পাশ করা নারী খুজিস্তা আখতার বানু।
হোসেন শহীদ সোহরাওয়ার্দীর নানা ছিলেন সমাজ সংস্কারক সৈয়দ আমীর আলীর শিক্ষক বিখ্যাত শিক্ষাবিদ ও সমাজ সংস্কারক ওবায়দুল্লাহ আল ওবায়দী সোহরাওয়ার্দী।
শহীদ সোহরাওয়ার্দীর দাদা ছিলেন বিশিষ্ট আইনজীবী সরদার মাওলানা মোবারক আলী সোহরাওয়ার্দী।
হোসেন শহীদ সোহরাওয়ার্দীর চাচা ছিলেন স্যার হাসান সোহরাওয়ার্দী (তিনিও নাইটহুড উপাধীপ্রাপ্ত)। তিনি ছিলেন রাজনীতিক ও খ্যাতনামা শিক্ষাবিদ।
হোসেন শহীদ সোহরাওয়ার্দীর ভাই হাসান শহীদ সোহরাওয়ার্দীও ছিলেন একজন বাঙালি কূটনীতিক, অনুবাদক, কবি ও শিল্প সমালোচক।
হোসেন শহীদ সোহরাওয়ার্দী বিয়ে করেন দুইবার। প্রথম স্ত্রী ব্রিটিশ ভারতের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী স্যার আবদুর রহিমের (নাইটহুড) কন্যা বেগম নেওয়াজ ফাতেমা।
সেখানে তাঁদের একজন কন্যা ছিল, নাম বেগম আখতার সুলাইমান। তিনি ১৯৭১ সালে পাকিস্তানের পক্ষ নেন এবং আমৃত্যু পাকিস্তানের নাগরিক ছিলেন।
১৯২২ সালে প্রথম স্ত্রী মারা গেলে সোহরাওয়ার্দী বিয়ে করেন পোলিশ বংশোদ্ভূত রাশিয়ান অভিনেত্রী বেগম বীরা সোহরাওয়ার্দীকে (আগে ভিন্ন নাম ছিল)।
এখানে তাঁদের এক পুত্র সন্তান হয়। তাঁর নাম শুরুতে ছিল রশিদ সোহরাওয়ার্দী, পরবর্তীতে নাম পরিবর্তন করে রাখেন রবার্ট আশবি যিনি বিখ্যাত ব্রিটিশ অভিনেতা হিসেবে পরিচিত।
রবার্ট আশবি (রশিদ সোহরাওয়ার্দী) ১৯৭১ সালে বাংলাদেশকে সমর্থন করেন এবং ১৯৯৬ সালের নির্বাচনে আওয়ামী লীগের সাথে কাজ করেন। পরবর্তীতে তিনি আর বাংলাদেশে স্থায়ী হননি।
হোসেন শহীদ সোহরাওয়ার্দী ১৯৬৩ সালে লেবাননের বৈরুতে মৃত্যুবরণ করেন। তাঁকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় সংলগ্ন তিন নেতার (শেরেবাংলা, সোহরাওয়ার্দী, খাজা নাজিমুদ্দিন) মাজারে সমাহিত করা হয়।
শ্রদ্ধার সঙ্গে স্মরণ করছি আজীবন সংগ্রামী, লিডার অব লিডারস সোহরাওয়ার্দীর প্রতি।
শেরে বাংলা এ কে ফজলুল হক সম্পর্কে জানতে ক্লিক করুন –