- মোঃ জোনায়েদ হোসেন
চাকরির পরীক্ষায় ভালো করার জন্য দীর্ঘমেয়াদী পরিকল্পনা যেমন গুরুত্বপূর্ণ, শেষ সময়ে যথাযথ প্রস্তুতিও তেমনি গুরুত্বপূর্ণ। শেষ সময়ের যথাযথ প্রস্তুতি এবং গোছানো পড়াশোনা বিসিএস পরীক্ষার সবচেয়ে প্রতিযোগিতামূলক ধাপ প্রিলিমিনারি পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হতে সহায়ক হয়।
৪৪তম প্রিলিমিনারি পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হবে আগামী ২৭ মে, ২০২২ তারিখে। হাতে আছে এখনো এক মাস সময়। এই সময়ের জন্য কয়েকটি বিষয় খুব গুরুত্বপূর্ণ। যেমন শারীরিক ও মানসিক সুস্থতা, নিয়মিত অধ্যয়নের মাধ্যমে প্রস্তুতি আরো ভালোভাবে নেওয়া ও কোন ঘাটতি থাকলে পূরণ করা এবং পরীক্ষার পরিবেশে অভ্যস্ত হওয়ার জন্য নিয়মিত মডেল টেস্ট দেওয়া ও মূল্যায়ন করা।
শেষ সময়ের প্রস্তুতি বিষয়ক পরামর্শগুলো সহজে বুঝার জন্য পয়েন্ট আকারে তুলে ধরছি-
* প্রিলিমিনারি পরীক্ষার মূল উদ্দেশ্য হলো প্রার্থী কমানো। ৪৪ তম বিসিএসে সাধারণ ও কারিগরি ক্যাডারের আবেদন করেছে প্রায় ৪ লাখের মতো চাকরিপ্রত্যাশী। এতো বিশাল সংখ্যক প্রার্থীর জন্য লিখিত পরীক্ষা আয়োজন করা অসম্ভব বিধায় ২০০ নম্বরের প্রিলিমিনারি পরীক্ষা নিয়ে আনুমানিক ২০ হাজার প্রার্থীকে লিখিত পরীক্ষা দেওয়ার সুযোগ দেয়া হবে। সুতরাং প্রিলিমিনারিকে বিসিএস পরীক্ষা দেওয়ার এন্ট্রি টেস্ট বললেও খুব বড় ভুল হবে না।
* যারা বিসিএস প্রস্তুতি নিচ্ছেন, তারা নিশ্চয়ই জানেন প্রিলিমিনারি পরীক্ষায় ২০০ তে ২০০ পেলে যা, ন্যূনতম পাস মার্ক পেলেও তা। এই নম্বর পরবর্তীতে আর কোথাও কাজে লাগে না। সুতরাং ২০০ নম্বরের টেনশন নিয়ে লাভ নেই। বিগত কয়েক বছরের প্রশ্ন নিশ্চয়ই ইতোমধ্যে দেখেছেন। পরীক্ষায় অংশ নেওয়া প্রার্থীদের সাথেও নিশ্চয়ই আপনার কথা হয়েছে। অতীতের অভিজ্ঞতা থেকে বলা যায়, ১২০ নম্বরের সামান্য কমবেশি পেলেই পাশ করার জন্য যথেষ্ট। সুতরাং অযথা চিন্তার দরকার নেই।
* যা পড়ছেন ভুলে যাচ্ছেন? মনে হচ্ছে অন্যরা হয়তো অনেক বেশি পারে, আপনি কম প্রস্তুতি নিয়েছেন। এমন ভাবনা হওয়াটাই স্বাভাবিক। আমারও এরকম মনে হতো। তবুও পরপর তিনবার মেরিট লিস্টের সামনের দিকে থেকে ক্যাডার হয়েছি। সুতরাং এরকম ভাবনা সবসময় খারাপ না।
* শেষ মুহূর্তে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হচ্ছে শারীরিক এবং মানসিকভাবে সুস্থ থাকা। করোনা মহামারীর সময় এবং ঋতু পরিবর্তনের কথা মাথায় রেখে বাড়তি সতর্ক থাকুন। ছোটখাট অসুখে যদি সপ্তাহখানেক সময়ও চলে যায় তা আপনার জন্য বিরাট মানসিক যাতনার কারণ হবে। পরিমিত ঘুম ও খাবার নিশ্চিত করবেন এবং কম হলেও কিছুটা সময় চিত্ত বিনোদনের জন্য রাখবেন।
* এই সময়টা নিয়মিত পড়াশোনা করলে অনেক কিছু কভার করতে পারবেন। একেবারে গুরুত্বপূর্ণ না হলে নতুন বিষয় পড়ার দরকার নেই। শেষ সময়ে নতুন বই কিনে নিজের উপর চাপ বাড়ানোরও দরকার নেই। যে বিষয়গুলো আগে পড়েছেন, তা বারবার পড়তে থাকুন। মনে হতে পারে ভুলে যাচ্ছেন, অসুবিধা নেই। পড়া থাকলে পরীক্ষার হলে আইডিয়া করে যে উত্তর দিবেন তা দেখবেন সঠিক হয়ে গেছে।
* ভালো কোন প্রকাশনীর একটা মডেল টেস্ট বই সংগ্রহ করে সপ্তাহে দুটি মডেল টেস্ট দিন। ঘড়িতে সময় ধরে এক ঘণ্টা পঁয়তাল্লিশ মিনিট সময়ে মডেল টেস্ট শেষ করুন। মডেল টেস্ট দেওয়ার সময় যতটা সম্ভব পরীক্ষার হল মনে করে সিরিয়াস হবেন। এতে আপনার জন্য বুঝা সহজ হবে কোথায় সমস্যা হচ্ছে। মডেল টেস্টে কোন অংশে সময় কেমন লাগছে তার একটা ধারণাও পাবেন। নিজের দুর্বলতা কাটিয়ে উঠার চেষ্টা করুন।
* আপনার রিসোর্স হলো সময়। এই সময় আপনি কীভাবে ব্যবহার করবেন এটা গুরুত্বপূর্ণ। কিছু জিনিস আপনি কম পারেন, এটা মেনে নিন। সবাই সব বিষয়ে সমান দক্ষ হয়না, দরকারও নেই। মনে করুন, আপনার হাতে সময় আছে দুই ঘণ্টা, এই সময়ে আপনি দুই নিয়মের গণিত দেখলে দুই নম্বর পাওয়ার সম্ভাবনা আছে, আবার এই সময়ে আপনি ১০০ টা শব্দের অর্থও শিখতে পারেন, কিন্তু আপনি নিশ্চিত না এই শব্দগুলো কমন পরবে কিনা। তাহলে আপনার উচিত গণিতের দুইটি নিয়ম শিখে নেয়া।
* সামনে আপনার ভাইভা না থাকলে সাম্প্রতিক বিষয়ে আর খুঁটিনাটি পড়ার দরকার নেই। আপডেট থাকার জন্য দিনের যেকোনো একটি খবর দেখতে পারেন। সাম্প্রতিক তথ্য সম্বলিত ম্যাগাজিন আপাতত না।
* শেষ এক সপ্তাহে কী পড়বেন তা গুছিয়ে রাখুন, এতে নতুন টপিক বা অজানা বিষয় সামনে এসে মনোবল নষ্ট হওয়ার সুযোগ তৈরি হবে না। শেষ সময়ে অযথা চাপ নেওয়ার দরকার নেই। অন্যের সাথে তুলনা করা বাদ দিন। খুব বেশি জানা কারো সাথে আপাতত বিসিএস বিষয়ক আলাপ বাদ দিন।
* কী কী বই পড়বেন এই বিষয়টা আর বলছিনা। বই যা সংগ্রহ করার তা ইতোমধ্যে আপনারা করেছেন। নতুন করে বইয়ের তালিকা পেলে আপনার মনে হতে পারে এই বইটা পড়িনি। না জানি কী মিস হয়ে গেল! এই সময়ে কারো পরামর্শে নতুন বই কিনতে গিয়ে বাড়তি ঝামেলায় পরবেন না।
* গণিতের যেসব নিয়মের অংক সবসময় আসে, সেসব নিয়মের একটি করে অংক এক খাতায় করে রাখতে পারেন। শেষ সময়ে একবার চোখ বুলিয়ে গেলে নিয়মগুলো মনে থাকবে।
* পরীক্ষার আগের রাতে পরিমিত ঘুমাবেন। এডমিট কার্ড দুই কপি, কলম দুই থেকে তিনটি স্বচ্ছ ফাইলে নিয়ে রাখবেন। পরীক্ষার সেন্টার অপরিচিত জায়গায় হলে এবং সুযোগ থাকলে আগে একবার দেখে আসুন। পরীক্ষার দিন যাতায়াত পরিকল্পনা আগেই ঠিক করে রাখুন।
* পরীক্ষার হলে সময় বিষয়ে সচেতন হবেন। আমি এক নম্বর প্রশ্ন থেকেই উত্তর দেওয়া আরম্ভ করতাম। আপনি কীভাবে অভ্যস্ত সেটা ঠিক করে নিন। চেষ্টা করবেন ১ ঘন্টা ৪০ মিনিটের মধ্যে শেষ পর্যন্ত উত্তর করার। যেটা পারবেন ভরাট করবেন। না পারলে ছোট্ট একটা চিহ্ন দিয়ে পরের প্রশ্নে চলে যাবেন। অযথা সময় ক্ষেপন করা যাবেনা। অনেক পরীক্ষার্থী সময়ের অভাবে শেষের দিকের সহজ প্রশ্ন মিস করে ফেলে। শেষে সময় পেলে ছোট্ট মার্ক করা প্রশ্নগুলো আবার চেষ্টা করুন।
* কাট-মার্ক কত হতে পারে এটা উত্তর দিতে দিতে একটা ধারণা পাবেন। বিগত কয়েক বছরের অভিজ্ঞতা বলে সামান্য কম-বেশি ১২০ নম্বর প্রিলি পাশ করার মতো নম্বর। এর বেশি পাবেন মনে হলে অপ্রয়োজনীয় ঝুঁকি নিবেন না। অপশনগুলোর মধ্যে যদি এমন হয় দুটি ছাড়া বাকি গুলো হবে না আপনি নিশ্চিত। সেক্ষেত্রে উত্তর করবেন। মনে করুন এরকম ১০টি প্রশ্ন। যদি ৫টি সঠিক হয় পাঁচ নম্বর, নেগেটিভ মার্ক হবে ২.৫ নম্বর। সুতরাং লাভে থাকবেন।
বিসিএস একটা দীর্ঘ জার্নি। এই প্রস্তুতি ভালোভাবে নিলে আরো অনেক চাকরি পাওয়াটাও সহজ হয়ে যায়। পজেটিভ থাকুন। পড়াশোনা করুন। সবার মঙ্গল কামনা করছি।
[মোঃ জোনায়েদ হোসেন একটানা তিনটি বিসিএসে চূড়ান্তভাবে সুপারিশপ্রাপ্ত হয়েছেন। তিনি ৩৫তম বিসিএসে তথ্য ক্যাডারে মেধাক্রমে ১ম, ৩৬ তম বিসিএসে কর ক্যাডারে মেধাক্রমে ৩য় এবং ৩৭তম বিসিএসে প্রশাসন ক্যাডারে মেধাক্রমে ৫৮তম হন। বর্তমানে তিনি গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকারের সহকারী কর কমিশনার হিসেবে কর্মরত আছেন।]