– মোঃ জোনায়েদ হোসেন
ক্যারিয়ার প্ল্যান বি, প্ল্যান সি
আমি জানতে চেয়েছিলাম কাঙ্ক্ষিত চাকরি না পেলে বা চাকরি ই না পেলে কী করবেন? অনেকেই উত্তর দিয়েছেন, সেজন্য ধন্যবাদ।
আমার কিছু ধারণা আপনাদের সাথে শেয়ার করছি। লেখাটি পয়েন্ট আকারে লিখছি যাতে বুঝতে সুবিধা হয়।
১. প্ল্যান এ বা চাকরির জন্য ইতোমধ্যে অনেক বিনিয়োগ করেছেন। এটা কোনভাবেই হুট করে ছেড়ে দিবেন না। শেষ চেষ্টা করুন। নিয়মিত পড়ুন, সৃষ্টিকর্তার সাহায্য প্রার্থনা করুন।
২. কাঙ্ক্ষিত চাকরি না পেলেও কাছাকাছি কোন চাকরি পেয়ে থাকলে শুকরিয়া করুন। সাধ্যমতো চেষ্টা করুন, কিন্তু না হলে মনে করুন এটাই আপনার জন্য সর্বোত্তম।
প্ল্যান বি, প্ল্যান সি..
৩. চাকরি ছাড়া আপনার আগ্রহ কিসে, আপনি দক্ষ কিসে, কী করতে ভালো লাগে, কিসের চাহিদা ভবিষ্যতে ভালো থাকবে ভাবুন। ধরুন আপনি কোন একটা টেকনিক্যাল বিষয়ে মোটামুটি দক্ষ, আরেকটু প্রশিক্ষণ বা চেষ্টা আপনাকে পুরো দক্ষ করে তুলবে। সুযোগটি কাজে লাগান।
৪. পরিবার, বন্ধু, শুভাকাঙ্ক্ষীদের সাথে বসুন মাঝে মাঝে। তাদের কোন ভালো পরামর্শ থাকলে গ্রহণ করুন। দিনশেষে তারাই আপনার পাশে থাকবে। নিজের সীমাবদ্ধতার কথা ও বাস্তবতা তাঁদের জানান।
৫. এবার সিদ্ধান্ত নিন কী করবেন। ব্যবসা, ফ্রিল্যান্সিং, শিক্ষকতা, বিদেশে যাবেন, কৃষি খামার করবেন, একেবারে নতুন কিছু করবেন।
৬. ব্যবসা যদি ভালো লাগে তাহলে অনলাইন বা অফলাইন যেকোন ব্যবসা করতে পারেন। অনলাইন ব্যবসা দিন দিন জনপ্রিয় হচ্ছে। অনলাইন ব্যবসার ক্ষেত্রে বিভিন্ন অঞ্চলের প্রসিদ্ধ জিনিস সংগ্রহ করে তুলনামূলক সাশ্রয়ী দামে সরবরাহ করলে আস্তে আস্তে ভালো অবস্থান তৈরি করা সম্ভব। মনে রাখবেন অনলাইন ব্যবসায় আপনার গ্রাহকই আপনার গুডউইল এম্বাসেডর। অনলাইন বিজনেসেও শেখার আছে অনেক কিছু। নিরাপত্তা, টেকনিক্যাল বিষয়গুলো জেনে শুরু করে দিতে পারেন।
৭. ফ্রিল্যান্সিং হতে পারে হাজার হাজার তরুণ-তরুণীর আকর্ষণীয় কর্মসংস্থান ক্ষেত্র। ফ্রিল্যান্সিং সম্পর্কে সবচেয়ে ভুল ধারণা হলো এখানে জয়েন করলেই কাড়ি কাড়ি টাকা! আসলে তা নয়, অন্যান্য পেশার মতো এটিও খুব চ্যালেঞ্জিং। আপনাকে সারা বিশ্বের সাথে প্রতিযোগিতা করে টিকে থাকতে হবে। দরকার ধৈর্য, একাগ্রতা ও শেখার আগ্রহ। আস্তে আস্তে আয় বাড়বে। ফ্রিল্যান্সিং এর মাধ্যমে আপনি একদিকে বৈদেশিক মুদ্রা অর্জন করতে পারবেন অন্যদিকে দেশের জন্য বয়ে আনতে পারবেন গৌরব। আপনার ভালো কাজ বাংলাদেশ সম্পর্কে একটা ভালো ইমেজ তৈরি করবে আর আপনার আয়ও দিন দিন বাড়বে।
৮. এছাড়া অনলাইনে ব্লগিং, ইউটিউব মনিটাইজিং, এফিলিয়েট মার্কেটিং, ইভেন্ট প্ল্যানিং, অনলাইন ওয়েবিনারসহ আধুনিক অনেক পেশায় যুক্ত হতে পারেন। আপনারা অনেকেই জানেন ভারত, শ্রীলঙ্কা, নেপালের বহু নাগরিক এদেশে উচ্চ বেতনে চাকরি করছে। তারা মূলত গার্মেন্টস, আইটি ও দামি রেস্টুরেন্টে জব করে। বেশিরভাগ কারিগরি দক্ষতার কাজ। এসব বিষয়ে দক্ষতা অর্জন করলে আপনিও জায়গা করে নিতে পারেন চমৎকার পারিশ্রমিকের এসব পেশায়।
৯. আপনার যদি টার্গেট হয় বিদেশে যাবেন তাহলে আপনার পরিবার, আত্মীয় কেউ প্রবাসী থাকলে তাদের সাথে কথা বলুন। প্রথমেই একটা বিষয় নিশ্চিত করবেন, অবৈধ পথে বিদেশ যাবেন না। জীবন একটাই, ভূমধ্যসাগরে বা ইউক্রেনের জঙ্গলে মরার কোন মানে হয়না। প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়ের বিভিন্ন প্রশিক্ষণ প্রতিষ্ঠান আছে। সেগুলোতে প্রশিক্ষণ নিয়ে জাপান, দক্ষিণ কোরিয়া ইত্যাদি দেশে যেতে পারেন। মধ্যপ্রাচ্যে মেতে চাইলে ভিসা, ওয়ার্ক পারমিট ভালোভাবে চেক করে যাবেন। ইউরোপ, উত্তর আমেরিকা, অস্ট্রেলিয়া যাওয়া তুলনামূলক কঠিন। আত্মীয়ের মাধ্যমে মেতে পারেন।
ইউরোপ বা আমেরিকার বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্র হিসেবে আবেদন করতে পারেন। মাস্টার্স করার জন্য মাঝারি মানের বিশ্ববিদ্যালয়গুলো টার্গেট করতে পারেন। তবে তা কিছুই করেন অন্ধকারে ঢিল না মেরে জেনে বুঝে করবেন। যে দেশে যাবেন সেদেশের ভাষা, সংস্কৃতি ও আইন কানুন সম্পর্কে ধারণা নিয়ে যাবেন। বিদেশে টেকনিক্যাল কাজের সুযোগ বেশি। যেখানেই যেতে চান কিছু একটা শিখে যান।
১০. কৃষি/খামার: খাদ্য, বস্রের চাহিদা কখনোই শেষ হবে না। কৃষি একটি অপরিহার্য সেক্টর। নতুন, নতুন কৃষির ধারণা দিন দিন বিকশিত হচ্ছে। গরুর খামার এখন একটি জনপ্রিয় সেক্টর। গরু এবং দুধ, দুগ্ধজাত খাবারের দাম অনেক। কেউ চাইলে গরুর খামার করতে পারেন। পাশাপাশি দুগ্ধজাত পন্যের একটা ব্র্যান্ড তৈরি করতে পারেন। সিলেটে আমি এরকম দেখেছি। বাড়ির ভিতরে মিস্টি, দই, পনির, ঘি তৈরি করছে। মান ভালো হওয়ায় মানুষ বাড়ি থেকে কিনে নিচ্ছে। আপনারা এরকম উত্পাদন করলে এলাকার দোকানগুলোতে সাপ্লাই দিতে পারেন। নিজ এলাকার মানুষদের ফেসবুকে এড করে মার্কেটিং করতে পারেন।
মুরগির খামার, হাঁসের খামার, কোয়েল পাখির খামার, কবুতরের খামার, মাছ চাষ এসব তো আছেই। ছোট্ট কিছু দিয়ে শুরু করে একদিন বড় কিছু হওয়ার স্বপ্ন দেখুন। মে কাজটি ই করবেন একটা জিনিস মাথায় রাখবেন, সঞ্চয় করতে হবে। আপনার আয় যদি ১০০০ হয় ১০০ টাকা আলাদা করে সঞ্চয় করুন। ৫০০০ হলে ৫০০ টাকা এরকম কিছু কিছু সঞ্চয় আপনাকে বড় করে তুলবে। ধনী আর গরীবের প্রধান তফাৎ ধনীরা সঞ্চয় করে। তাই অল্প হলেও সঞ্চয় করবেন।
১১. অনেকেই শিক্ষকতা করবেন। ভালো শিক্ষকের অনেক সংকট আমাদের। এর দায় শিক্ষকদের না, সমাজের। যাই হোক, শিক্ষক হতে চাইলে নিজে পড়ুন, ভালো ভাবে বুঝুন। এটা নিয়ে পরামর্শ দেওয়ার তেমন বেশি কিছু নেই।
১২. ১০০টি অর্থনৈতিক অঞ্চল হচ্ছে সামনে। প্রচুর মানুষের কর্মসংস্থান হবে। কারিগরী কাজের চাহিদা অনেক বেশি থাকবে সেখানে। খোঁজ খবর রাখুন। যেকোন কাজে দক্ষতা অর্জন করুন।
১৩. আমার সাথে অনেক প্রবাসীর কথা হয়। বিদেশে তাঁরা সব ধরণের কাজ করেন। কিন্তু বাংলাদেশে ইগোর সমস্যার কারণে সব কাজ করতে পারেননা। এর দায় আমাদের সবার। তবু এর থেকে বের না হওয়ার উপায় নেই। জীবন একটাই, সুতরাং চাকরি হয়নি, এই জীবনের মানে নেই, এটা বলে আসলে কোন লাভ নেই।
শুরুর কথাটা আমার বলে শেষ করছি, প্ল্যান এ বা চাকরির জন্য ইতোমধ্যে অনেক বিনিয়োগ করে ফেলেছেন। হুট করে এটা ছেড়ে দেওয়ার দরকার নেই। কিন্তু যখন আর কোন সুযোগ থাকবে না তখনকার জন্য কিছু হোমওয়ার্ক করে রাখতে পারেন। আপনাদের সর্বাঙ্গীন সাফল্য কামনা করছি।