প্রশ্ন ১ঃ আসসালামুয়ালাইকুম স্যার। কেমন আছেন এবং চাকুরী জীবন কেমন যাচ্ছে?
উত্তরঃ ওয়ালাইকুম আসসালাম। আলহামদুলিল্লাহ ভালো আছি। চাকরিও এনজয় করছি।
প্রশ্ন ২ঃ স্যার, আমি এবার অনার্স ফাইল ইয়ারে পড়ি, জীবনের প্রথম বিসিএস -এ ক্যাডার হতে চাই। কীভাবে শুরু করব,কোন বইগুলো দিয়ে শুরু করব?
উত্তরঃ প্রথম বিসিএস এ ক্যাডার হয় অনেকেই। আপনি যদি যোগ্য হন, পরিশ্রম করেন এবং মহান আল্লাহ সহায় হয় তাহলে আপনিও পারবেন।
বিসিএস একটা চাকরির পরীক্ষা। একাডেমিক লাইফে আমরা সবাই একটা নির্দিষ্ট সাবজেক্ট বিশেষ জ্ঞান অর্জন করি। আর চাকরির পরীক্ষাটা সব ধরণের ব্যাকগ্রাউন্ড থেকে আসা শিক্ষার্থীদের জন্য।
সেজন্য এর প্রশ্ন হয় সবাই যা পড়েছে অথবা সবার যা জানা উচিত এর উপর। গণিত, ইংরেজি, বাংলা আর সাধারণ জ্ঞান এখানে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ।
হাইস্কুল লেভেলের গণিত ও ইংরেজির জ্ঞান থাকা আবশ্যক। প্রথমেই বিসিএস এর সিলেবাসটা বুঝতে হবে। বিপিএসসির ওয়েবসাইটে সিলেবাস আছে।
এরপর ভালো একটা জব সলিউশন সংগ্রহ করে বিগত বছরের প্রশ্ন এবং এর উত্তরগুলো একাধিকবার পড়লে বিসিএস এর জার্নিটা সম্পর্কে একটা স্বচ্ছ ধারণা হবে। এরপর ধীরে ধীরে নিজেই নিজেকে গাইড করতে পারবেন।
প্রশ্ন ৩ঃ স্যার, বিসিএস এর জন্য ভালোভাবে ১ সেট বই পড়া কি যথেষ্ট, নাকি একাধিক সেট?
উত্তরঃ চাকরির পরীক্ষায় যিনি প্রথম হন তাঁর টেবিলে যেসব বই আছে, যিনি কোনদিন প্রিলিও পাশ করেননি তাঁর টেবিলেও সেসব বই আছে। তাহলে কী দাঁড়ালো? বইয়ের ভূমিকা চাকরির প্রস্তুতিতে খুব বেশি না।
বাজারে যেসব বই পাওয়া যায় সেগুলো ১৯-২০। আমি একজন চাকরিপ্রার্থীকে বলবো সে বইটা কিনবেন যেটা এই তিনটা শর্ত পূরণ করে-
ক. বইটি পড়তে আপনার ভালো লাগে (উপস্থাপনা, প্রিন্ট, কাগজ যথাযথ)।
খ. বইটি মোটামুটি নির্ভুল (ভুল তথ্য কম, বানান ভুল কম)।
গ. বইটিতে অপ্রয়োজনীয় তথ্য কম।
দেখেশুনে এক বা একাধিক প্রকাশনী মিলিয়ে এক সেট বই কিনলেই হবে। সিনিয়রদের পরামর্শ নিবেন এবং সম্ভব হলে কয়েকটা পাতা পড়ে নিবেন।
আমার ইউটিউব চ্যানেল এ বিসিএস ও অন্যান্য চাকরির সব ধরণের গাইডলাইন পাবেন…
প্রশ্ন ৪ঃ অনেকেই বলে বিসিএস এর জন্য কোচিং করা আবশ্যক। এটা কতটা সত্য? আর কেউ যদি কোচিং করতে চায় তাহলে সে কখন থেকে শুরু করতে পারে?
উত্তরঃ আবশ্যক না। আমি কোন কোচিং করিনি। কোন পর্যায়ে ই না। আমার কাছে মনে হতো সব ম্যাটেরিয়াল বাজারে আছে আর মাস্টার্স পাস একটা ছেলেকে আলাদা গাইড করার দরকার কী?
তবে কোচিংকে আমি অপ্রয়োজনীয় বলবো না। বেশিরভাগ ক্যাডার অফিসার কোচিং করে থাকেন। অনেকে নিজে নিজে গুছিয়ে পড়তে পারে না।
আবার একটা গ্রুপের সাথে থাকলে একটা ফ্লো পাওয়া যায়, নিজেকে অন্যদের সাথে তুলনা করা যায়। এর সুবিধা আছে অনেক। আসা যাওয়ায় যদি খুব বেশি সময় নষ্ট না হয় তাহলে কোচিং খারাপ না।
অনলাইন কোচিং এখন জনপ্রিয় হচ্ছে। অনলাইন কোচিং এর মাধ্যমে কে কতটা উপকার পাচ্ছে আমি জানিনা। আপনার জীবনের এ সময়টা মহাগুরুত্বপূর্ণ।
বিভিন্ন গ্রুপ খুলে স্টাডির নামে ফান করা, নতুন বন্ধু খোঁজা, আড্ডা দেওয়া মানে নিজেকে হারিয়ে ফেলা। এগুলো যাতে না হয়। এই সময়টা আর আসবে না।
প্রশ্ন ৫ঃ মানবিক বিভাগ থেকে আসা বেশিরভাগ শিক্ষার্থী গণিতকে ভয় পায় এবং এই ভয়ের কারণ সম্প্রতি হওয়া পরিক্ষাগুলোতে আরও জোরালো হয়েছে। স্যার, এই গণিত বিষয়টি কীভাবে আয়ত্তে আনা সম্ভব?
উত্তরঃ সাম্প্রতিক পরীক্ষাগুলোতে গণিত আসলেই কঠিন হচ্ছে। কঠিন মানে বড় বড় প্রশ্ন আসছে এমন না। বেসিক যাদের ভালো তারা কয়েক সেকেন্ডে উত্তর করতে পারছে, অন্যদিকে অনেক চাকরিপ্রার্থী প্রশ্নই ধরতে পারছে না।
আমি চাকরিপ্রার্থীদের সবসময় বলি গণিত বুঝে করতে। খাতায় লিখে লিখে পুরো অংকটা করতে। একজন চাকরিপ্রার্থী যখন অংকটা বুঝবে তখন একটা পর্যায়ে সে শর্টকাট পারবে।
কিন্তু শুরুতে না বুঝে শর্টকাট টেকনিক শিখতে গেলে হিতে বিপরীত হতে পারে।
যাদের হাতে সময় আছে প্রয়োজনে কারো কাছে কয়েকমাস হাইস্কুলের গণিত পড়তে পারেন। অনার্সে টিউশন করলেও একটা বেনিফিট পাওয়া যায়।
আর নিজে খাতায় লিখে লিখে অনুশীলন করলে একসময় গণিত ভীতি কমে আসবে।
প্রশ্ন ৬ঃ স্যার, অনেকেই মনে করে অনার্সের পর মাস্টার্স না করে এই সময় জব প্রস্তুতি নেবে। এই বিষয়ে আপনি কী বলবেন। আসলে মাস্টার্স করা কতটা প্রয়োজন এবং কাদের জন্য প্রয়োজন?
উত্তরঃ আমাদের বেশিরভাগ মাস্টার্স তো সরাসরি অনার্স শেষে ভর্তি হয়ে শুরু হয়ে যায়। আমার হিসেবে মাস্টার্স করে ফেলা যায়।
চাকরির প্রমোশনে এর একটা পয়েন্ট আছে। তবে কেউ যদি মনে করে এতে চাকরির পড়া কম হবে তাহলে ছাড়তে পারে।
আমি করেছি। বেশিরভাগ ক্যাডার অফিসার ই করেছে। হাতে গোনা কয়েকজনকে ছাড়তে দেখেছি।
প্রশ্ন ৭ঃ আপনার টানা সফলতার চাবিকাঠি বা মূলমন্ত্র কী ছিল এবং আপনার সফলতার পিছনে কাদের অবদান কখনো ভুলতে পারবেন না?
উত্তরঃ আমাকে সফল বলা যায় না সম্ভবত। কয়েকটা চাকরি পেয়েছি, এইতো! জাপানে ৯৮ ভাগ মানুষ প্রথম চাকরি থেকেই অবসর নেয়।
এর কারণ ওখানে বৈষম্য কম। আমাদের এখানে এভারেজ এ প্রতিজন ক্যাডার অফিসার তিন-চার বার চাকরি পরিবর্তন করে শেষে এক জায়গায় থিতু হয়।
এদেশে সুযোগ সুবিধা, সামাজিক স্বীকৃতি ইত্যাদিতে অনেক ব্যবধান চাকরি গুলোর মাঝে।
যাইহোক, আমি অনেক পড়াশোনা করেছি। গুছিয়ে পড়তাম। বুঝে বুঝে, একটা ঘটনার সাথে আরেকটা ঘটনা মিলিয়ে অনেক আনন্দ নিয়ে আমি পড়তাম।
শুধু পড়ার জন্য পড়া নয়! জানার জন্য, শেখার জন্য পড়তাম সেজন্য আমার পড়াগুলো খুব স্থায়ী হতো। এজন্য মোটামুটি সব চাকরির পরীক্ষাতেই ভালো করতাম।
পাঁচটা প্রথম শ্রেণীর চাকরির ভাইভা (চারটা বিসিএস, একটা সোনালী ব্যাংকের সিনিয়র অফিসার) দিয়ে পাঁচটাতেই চাকরি পেয়েছি।
আমার এটাকে সফলতা ধরলে সবকিছুর একমাত্র অবদান মহান আল্লাহর। আমি আসলে এতো যোগ্য না।
আমি এটা অনুধাবন করতে পারি তিনি কীভাবে আমাকে সাহায্য করেছেন। আলহামদুলিল্লাহ।
প্রশ্ন ৮ঃ সামনেই ৪৫ তম বিসিএস প্রিলিমিনারি পরিক্ষা, হাতে বেশি একটা সময় নেই। এমন সময়গুলো আপনি নিজেকে কীভাবে প্রস্তুত করেছিলেন?
উত্তরঃ পড়াশোনা করতে হবে। বিকল্প কিছুই নেই। নিজেকে ফাঁকি দেওয়া যাবে না। পড়লে ভুলে যাবেন, অসুবিধা নাই।
পরীক্ষার হলে এটাও কাজে দিবে। শরীরের যত্ন আর পড়াশোনা। সময় অপচয় করা যাবে না। সামাজিক -পারিবারিক আচার অনুষ্ঠানে কম যেতে হবে।
সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম কম ব্যবহার করতে হবে। ৩৪তম এবং ৩৫ তম বিসিএস এর আগে আমি ২ মাস ফেসবুক ডিএক্টিভ রেখেছিলাম।
প্রশ্ন ৯ঃ অবসরে কোন কাজগুলো বেশি করা হয়?
উত্তরঃ প্রচুর পড়ি, লিখি, খেলা দেখি। অবশ্য পরিবার কাছে থাকলে পরিবারকেই সময় দিই। বাকিসব বাদ তখন।
প্রশ্ন ১০ঃ স্যার,এটা একটা প্রচলিত কথা হয়ে গেছে যে পরিক্ষার হলে সময় পাইনা। তাই সবশেষে জানতে চাই, একজন শিক্ষার্থী পরিক্ষা কেন্দ্রে কীভাবে প্রশ্ন উত্তর করবে এবং কতগুলো প্রশ্ন তার দাগানো উচিত?
উত্তরঃ প্রিলিমিনারি পরীক্ষার ক্ষেত্রে আমি প্রশ্নের ০১ থেকে শুরু করে ২০০ পর্যন্ত যেতাম। প্রতিটা প্রশ্ন পারলে উত্তর করতাম, না পারলে প্রশ্নে ছোট্ট একটা দাগ দিয়ে পরের প্রশ্নে চলে যেতাম।
গণিতের ক্ষেত্রেও। কখনোই বার বার শুরুতে ট্রাই করতাম না। প্রথম বারে শেষ পর্যন্ত গেলে একবার গুনে নিতাম। আমার একটা ধারণা হয়ে যেতো কত পাবো।
এরপর ছোট্ট দাগ দেওয়া প্রশ্নগুলো পুনরায় দেখতাম। আমার কখনোই এমন হয়নি সময়ের অভাবে জানা জিনিস উত্তর করতে পারিনি।
কতগুলো উত্তর করবো এটাতো নির্ভর করবে কতগুলো পারি। চারটা অপশন অজানা হলে উত্তর করা উচিত না। এমন যদি হয় অপশনগুলোর দুটি নিশ্চিত হবে না, বাকি দুটির যেকোনো একটি হবে সেক্ষেত্রে উত্তর করে আসা উচিত।
প্রশ্ন সহজ হলে ১৩০, কঠিন হলে ১১০ এর পর ঝুঁকি কম নেওয়া উচিত। এটা চাকরিপ্রার্থীরা পরীক্ষার হলেই বুঝবে।
সবার জন্য শুভকামনা।
আমার ফেসবুক পেইজ-