শেরে বাংলা এ কে ফজলুল হক
বাংলার ইতিহাসের একটা অবিচ্ছেদ্য অংশ হয়ে আছেন তিনি।
বঙ্গবন্ধু তাঁর বিখ্যাত অসমাপ্ত আত্মজীবনী বইতে লিখেছেন, বঙ্গবন্ধুর মা তাঁকে বলেছিলেন -‘বাবা যাহাই করো, হক সাহেবের বিরুদ্ধে কিছুই বলিও না। শেরে বাংলা মিছামিছি ‘শেরে বাংলা’ হন নাই। বাংলার মাটিও তাঁকে ভালোবেসে ফেলেছিল।”
আমার আজকের লেখা অবশ্য রাজনীতিবিদ শেরে বাংলা কে নিয়ে না; ব্যক্তি শেরে বাংলা কে নিয়ে। তিনি কোথায় জন্মেছেন, কোথায় পড়াশোনা করেছেন, কাকে বিয়ে করেছেন, সন্তানরা কোথায়, কোথায় মারা গেলেন এবং সমাহিত হলেন এসব নিয়ে।
আমরাতো আমাদের ইতিহাসের অনেক নায়ক থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে যাই সহজেই। শেরে বাংলা, হোসেন শহীদ সোহরাওয়ার্দী, মাওলানা ভাসানী, মাওলানা আব্দুর রশিদ তর্কবাগীশ এরকম বহু বড় বড় মানুষেরা আমাদের থেকে হারিয়ে গেছেন।
তাই একটু জানার চেষ্টা করলাম। আজ শেরে বাংলা কে নিয়ে লিখছি, সামনে সুযোগ পেলে অন্যদের নিয়ে লিখবো।
শেরে বাংলা এ কে ফজলুল হক জন্মগ্রহণ করেছিলেন বরিশালে। ছিলেন অত্যন্ত মেধাবী। প্রবেসিকা (এসএসসি) পরীক্ষায় মুসলমানদের মধ্যে প্রথম হয়েছিলেন।
অনার্স করেন তিন সাবজেক্ট এ গণিত, রসায়ন ও পদার্থ বিদ্যায়। মাস্টার্সে ভর্তি হন ইংরেজি সাহিত্যে। ছয়মাস পর কেউ একজন বলেছিল, মুসলমান গণিত পারে নাকি?
এরপর সাবজেক্ট পরিবর্তন করে ছয়মাস পড়ে গণিতে প্রথম শ্রেণী অর্জন করেন!
শেরে বাংলা এ কে ফজলুল হক বিয়ে করেছেন তিন বার। তাঁর প্রথম স্ত্রী ছিলেন নবাব আব্দুল লতিফ পৌত্রী খুরশিদ তালাত বেগম। সেখানে তাদের দুটি কন্যা সন্তান হয়।
খুরশিদ তালাত হক অল্প বয়সে মারা গেলে তিনি বিয়ে করেন জিন্নাতুন্নেসা নামের একজনকে। তিনিও নিঃসন্তান অবস্থায় মারা যান। সর্বশেষ তিনি বিয়ে করেন খাদিজা নামের এক ভদ্র মহিলাকে।
সেখানে তাঁর এক ছেলে হয়। নাম এ কে ফাইজুল হক। শেরে বাংলা এ কে ফজলুল হকের ছেলে এ কে ফাইজুল হক আওয়ামী লীগের এমপি ছিলেন এবং ১৯৯৬ সালের সরকারের প্রতিমন্ত্রী ছিলেন। তিনি ২০০৭ সালে মারা যান।
এছাড়া তাঁর প্রথম স্ত্রীর মেয়ের ঘরের নাতনি ছিলেন রাজিয়া বানু। তিনি বাংলাদেশের প্রথম সংসদের এমপি ছিলেন এবং বাংলাদেশ সংবিধান প্রণয়ণ কমিটির একমাত্র মহিলা সদস্য ছিলেন।
শেরে বাংলা একে ফজলুল হক ছিলেন পূর্ব পাকিস্তানের গভর্নর (১৯৫৫-৫৬), পূর্ব বাংলার মূখ্যমন্ত্রী (১৯৫৪-১৯৫৫), বাংলার প্রধানমন্ত্রী (১৯৩৭-১৯৪৩)।
১৯৪০ সালের বিখ্যাত লাহোর প্রস্তাব তিনিই উপস্থাপন করেন।
উপমহাদেশের প্রখ্যাত এই রাজনীতিবিদ মারা যান ১৯৬২ সালে ঢাকায়। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের পাশে ঐতিহাসিক তিন নেতার মাজারে (শেরেবাংলা, সোহরাওয়ার্দী, খাজা নাজিমুদ্দিন) তাঁকে সমাহিত করা হয়।