চেক, পে-অর্ডার, ব্যাংক ড্রাফট, চালান কী; কীভাবে কাজ করে?

চেক, পে-অর্ডার, ব্যাংক ড্রাফট, চালান বিষয়ে আজ খুব গুরুত্বপূর্ণ এবং প্রয়োজনীয় একটা লেখা লিখছি। সবারই এই বিষয়গুলো লাগে। খুবই সহজে এবং আনন্দ নিয়ে জেনে নিন।

চেক বা ব্যাংক চেক

চেক বা ব্যাংক চেক তো সবাই চিনেন। জিনিসটা আসলে কী?

ধরেন, আপনার একটা একাউন্ট আছে সোনালী ব্যাংকে। ব্যাংক আপনাকে একটা চেকবই দিল। এখন আপনার একাউন্ট এ টাকা থাকলে আপনি বা আপনার পক্ষে কেউ এই টাকা তুলতে পারবে। 

সেজন্য আপনার স্বাক্ষর লাগবে। আপনি টাকার পরিমাণ লিখে ও স্বাক্ষর দিয়ে চেকটা কাউন্টারে জমা দিলে ব্যাংক আপনাকে বা যে কাউকে উক্ত পরিমাণ টাকা দিয়ে দিবে। ব্যাংকের এখানে প্রধান কাজ চেকটা সঠিক কিনা যাচাই করা।

কে টাকা নিচ্ছে এটা ব্যাংকের বিষয় না। স্বাক্ষর ও টাকার পরিমাণ ঠিক থাকলে এবং একাউন্টে টাকা থাকলে উক্ত টাকা দিতে ব্যাংক বাধ্য। সব ঠিক থাকলে টাকা না দিলে ব্যাংকের শাস্তি হবে।

https://www.facebook.com/jonayedhossain89

তাহলে চেক জিনিসটা কী?

– চেক হলো ব্যাংকের একাউন্ট এর মালিকের অনুমতি পত্র। টাকার মালিক ব্যাংকে থাকা টাকা থেকে চেক এ উল্লেখিত টাকা দিতে ব্যাংক কে অনুমতি দেয়। 

এটাই, আর কিছু না। এবার আরো গুরুত্বপূর্ণ একটা বিষয় জেনে নিন।

 

ছবিঃ চেক

চেকের মধ্যে দেখবেন লেখা থাকে-

Pay too…………………… or bearer 

এখানে খালি জায়গায় আমরা নিজে তুললে নিজ/Self/নিজের নাম লিখি। অন্য কাউকে দিয়ে তুললে বা দিলেও তার নাম লিখি। 

তাহলে উপরের লাইনটা কী দাঁড়ালো-

Pay to self or bearer.

অথবা

Pay to Abdul Karim or bearer.

এই or bearer (অথবা বাহককে) কথাটা কিন্তু খুব গুরুত্বপূর্ণ। এটা থাকার কারণে উপরের লাইনগুলোর অর্থ হয়, আমাকে / আব্দুল করিমকে পে করুন অথবা এর বাহককে (চেকটির বাহককে)। 

এর অর্থ হলো চেকটি যে কেউ নিয়ে গেলেই টাকা দিতে ব্যাংক বাধ্য। কেউ যদি চান শুধু আব্দুল করিমকেই টাকাটা দিতে তাহলে এক টান দিয়ে or bearer কথাটা কেটে দিবেন। or bearer কথাটা থাকলে যে কেউ চেকটি পেলে সে উক্ত টাকার মালিক। 

কোন কারণে চেক হারালে বা চুরি হলে অবশ্য আপনি ব্যাংক কে জানিয়ে চেকটি স্থগিত করতে পারবেন। কিন্তু আপনি এরকম কিছু রিপোর্ট করেননি, আপনার স্বাক্ষর সঠিক দেখে ব্যাংক ভিন্ন কাউকে টাকা দিয়ে দিলে আপনি ব্যাংক কে কিছুই বলতে পারবেন না।

এবার আসেন আরকেটা জিনিস শিখাই। ধরেন, আপনি আব্দুল করিমকে একটা চেক দিবেন। তাহলে আপনি Pay to Abdul Karim or bearer লিখে দিলেন। কিন্তু আপনি চাচ্ছেন এটা আরেকটু সিকিউর থাকুক।

তাহলে আপনি চেকের উপরে একটা সংকেত দিতে পারেন একাউন্ট পেয়ি সংকেত। চেকের উপরে বাম পাশে যদি আপনি দুটি সমান্তরাল লাইন টেনে দেন তাহলে এর অর্থ হলো, এই টাকা Abdul Karim এর একাউন্টেই শুধু জমা হবে। হাতে তুলতে পারবে না।

 

ছবিঃ একাউন্ট পেয়ি চেক

Abdul Karim এর একাউন্ট এর তথ্যও ব্যাংকের কাছে আছে, আপনার টাকাটা আব্দুল করিম পেলো এই প্রমাণটাও থাকলো। 

পে অর্ডার/ Pay Order

এবার আসেন গুরুত্বপূর্ণ আরো কয়েকটি বিষয় জেনে ফেলি। পে-অর্ডার বা ব্যাক ড্রাফটের কথাতো শুনেছেন। এগুলো কী? 

খুব সহজে বলি, ধরেন আপনার একটা পরীক্ষার ফি বা ট্যাক্সের টাকা জমা দিতে হবে। আপনি ব্যাংকে গিয়ে বললেন, ৫০০০ টাকার পে-অর্ডার করবো। ব্যাংক আপনার কাছ থেকে ৫০০০ টাকা এবং সাথে আরো ২০-৫০ টাকা চার্জ নিল।

কার নামে করবেন এটার একটা ফর্ম পূরণ করে দিলেন এবং সে ফর্ম এ দেওয়া তথ্য থেকে ব্যাংক আপনাকে একটা পে-অর্ডার দিল ৫০০০ টাকার। এবার আপনি যেখানে দেওয়ার দরকার সেখানে এটি জমা দিলেন।

 

ছবিঃ পে অর্ডার

– এই যে ব্যাংক আপনাকে ৫০০০ টাকার পে-অর্ডার দিল এটা আসলে কী? 

– এটা হলো ব্যাংকের পক্ষ থেকে একটা লিখিত গ্যারান্টি বা ব্যাংকের চেক। ব্যাংক লিখিত দিয়েছে তাদের কাছে ৫০০০ টাকা জমা দিয়েছে, এই টাকা প্রাপক (যার নামে পে-অর্ডার করা হয়েছে) আসলে তারা দিতে বাধ্য বা দিবে। 

ধরেন, আপনি আব্দুল জব্বারের নামে পে-অর্ডার করেছেন। আব্দুল জব্বারকে আপনি ঐ পে-অর্ডারটি দিয়েছেন। আব্দুল জব্বার বা তার লোক ঐ ব্যাংকে পে-অর্ডারটি জমা দিলে ৫০০০ টাকা পেয়ে যাবে। 

ব্যাংক ড্রাফট / Bank Draft

এবার তাহলে দেখেন ব্যাংক ড্রাফট কী?

ধরেন, উপরের পে-অর্ডারটি করেছেন সোনালী ব্যাংক, আগ্রাবাদ শাখায়।‌ আপনার টাকাটা আগ্রাবাদ শাখাতেই থাকবে। প্রাপক বা তার পক্ষে কেউ আগ্রাবাদ শাখায় পে-অর্ডার নিয়ে আসলে টাকাটা পাবে।

কিন্তু ব্যাংক ড্রাফট যদি করেন তখন আপনি আব্দুল জব্বারের যেখানে একাউন্ট আছে সেটা উল্লেখ করে করবেন। মনে করেন, আব্দুল জব্বারের একটা একাউন্ট আছে রমনা শাখায়।

আগ্রাবাদ শাখা থেকে রমনা শাখার ঐ একাউন্ট উল্লেখ করে উক্ত ব্যাংক ড্রাফটটি হবে। এবং আব্দুল জব্বার সাহেব ড্রাফটি পেলে নিজ একাউন্টের বিপরীতে এটি জমা দিবেন এবং তার একাউন্টে টাকাটা প্রথমে ঢুকবে।

তাহলে পে-অর্ডার আর ব্যাংক ড্রাফটের মূল পার্থক্য হলো পে-অর্ডার যেখান থেকে করা হয় টাকাটা সেখান থেকেই ক্যাশ করতে হয় বা তুলতে হয় কিন্তু ব্যাংক ড্রাফট এর ক্ষেত্রে টাকাটা সরাসরি প্রাপকের একাউন্ট এ ঢুকে।

সর্বশেষ টপিক-চালান

চালান হলো সরকারি একাউন্ট এ টাকা জমা দেওয়া। আর কিছু না। সরকারি কিছু একাউন্ট নম্বর আছে (চালান কোড)। সেগুলোতে টাকা জমা দেওয়াটাই চালান। 

অনেক কিছু জানলেন। হ্যাপি লার্নিং 🙂

-Jonayed Hossain

Share this Article:

Facebook
Twitter
LinkedIn