Jonayed Hossain

stock exchange, pay, business-1222518.jpg

শেয়ার বাজার কী? লাভ-ক্ষতি কীভাবে হয়?

-মোঃ জোনায়েদ হোসেন

আমাদের দেশের ৯৯ ভাগ মানুষই জানে না শেয়ার বাজার জিনিসটা কী।‌ ওখান থেকে টাকা আয় হয় কীভাবে, শেয়ারের দাম বাড়ে কমে কীভাবে এসব মোটামুটি বেশিরভাগ মানুষই বুঝে না। এমনকি যারা শেয়ারবাজারে বিনিয়োগ করে তাদের বেশিরভাগ মানুষই বুঝে না এখানে আসলে কী ঘটে!

https://www.facebook.com/jonayedhossain89

আসেন একেবারে সহজ করে জিনিসটা বুঝে ফেলি।

মনে করেন, একটা কোম্পানির নাম জেএইচ লিমিটেড। এর মালিক জোনায়েদ হোসেন, মাসুদ রানা এই দুইজন। কোম্পানিটির পুঁজি ৫ লাখ টাকা (যেকোন একটা ব্যবসা করছে)। 

এখন এই কোম্পানি চিন্তা করলো ব্যবসাটা আরেকটু বড় করবে। সবকিছু ভেবে সিদ্ধান্ত নিল আরো ১৫ লাখ টাকার পুঁজি নিবে তারা শেয়ার বাজার থেকে। 

এরপর শেয়ার বাজারে বিভিন্ন নিয়ম মেনে কোম্পানিটি শেয়ার বাজারে লিস্টেড হওয়ার জন্য আবেদন করবে। অনুমোদন পেলে শেয়ার বিক্রির বিজ্ঞাপন দিবে।

জেএইচ লিমিটেড এর আগের ৫ লক্ষ এবং শেয়ার বাজারের ১৫ লক্ষ মিলে মোট হবে ২০ লক্ষ টাকা। এটাতে প্রতি শেয়ারের দাম যদি ১০০ টাকা ধরে তাহলে মোট শেয়ার হবে ২০ হাজারটি। এর মধ্যে জেএইচ লিমিটেড এর মূল মালিকের শেয়ার ৫ হাজারটি(৫ লাখে); আর বাজারে শেয়ার ১৫ হাজারটি(১৫ লাখে)। 

এই ১৫ হাজার শেয়ার এর মধ্যে ১০ টি করে লট (একজন সর্বনিম্ন কয়টি) করে ধরলে সর্বোচ্চ ১৫০০ জন কিনতে পারবে। বিজ্ঞানপন প্রকাশের পর ধরেন ৫০০০ জন আবেদন করলো। এদের মধ্যে লটারি হবে। লটারিতে জয়ী ১৫০০ জন ১৫০০০ শেয়ার পেলো। এটাকে IPO বা Initial Public Offering বলে। এই কেনাবেচার প্রক্রিয়াটাকে বলে প্রাইমারি মার্কেট। 

এবার দেখেন, জেএইচ লিমিটেড এর মোট পুঁজি ২০ লাখ টাকা। এর মালিক মূল ২ জন (৫ হাজার শেয়ার) এবং ১৫০০ জন (১৫ হাজার শেয়ার) যৌথভাবে। মোট ১৫০২ জন সবাই কোম্পানিটির মালিক।

এবার মনে করেন, আবদুল্লাহ তাশরিফ লটারি জিতে এই কোম্পানির ১০ টি শেয়ার কিনেছেন। ১ টি শেয়ারের দাম ১০০ টাকা, সুতরাং তিনি ১০ টি শেয়ার কিনেছেন ১০০০ টাকা দিয়ে। এখন আবদুল্লাহ তাশরিফ চাইলে এই শেয়ার রেখে দিতে পারেন, আবার বিক্রি করে দিতে পারেন। এখানে প্রতিটি শেয়ারের দাম ১০০ টাকা, এটাকে বলে ফেস ভ্যালু। 

এরপর কোম্পানির সুনাম, ব্যবসার ধরণ ইত্যাদির উপর নির্ভর করে এই কোম্পানির শেয়ারের দাম বাড়তে বা কমতে পারে। ধরেন দুই মাস পর প্রতিটি শেয়ারের দাম হলো ১০৫ টাকা। এখন আবদুল্লাহ তাশরিফ ১০৫ টাকা দামে শেয়ারগুলো বিক্রি করে দিল সে পেলো ১০৫০ টাকা। তাহলে তার লাভ হলো ৫০ টাকা। এটা তার মূলধনী আয়। 

এই যে ৫০ টাকা বেড়েছে এটার সাথে কিন্তু কোম্পানির পুঁজি বাড়েনি। কোম্পানির মূল হিসাব একই আছে। 

এখন ধরেন ১০৫০ টাকা দিয়ে সাইমা তাসনিম শেয়ারগুলো কিনেছে। সে কিছুদিন পর দেখলো প্রতি শেয়ারের দাম ১০৭ টাকা। সে শেয়ারগুলো বিক্রি করে দিল ১০৭০ টাকা দামে। তার লাভ ২০ টাকা। এটাও তার মূলধনী আয়।‌

এবার ধরেন, ওবায়েদুর রহমান কিনেছিল ১০৭০ টাকা দিয়ে। সে বিক্রি করেনি এখনো। এর মধ্যে কোম্পানির এজিএম (বার্ষিক সাধারণ সভা, কোম্পানির লাভ-ক্ষতি হিসাব ঘোষণা হয় এখানে) হলো। কোম্পানি মোট লাভ করলো ৪ লাখ টাকা। এটা পাবে ২০ হাজার শেয়ারের মালিকেরা সবাই।

তাহলে প্রতিটি শেয়ার পাবে ২০ টাকা। প্রথম মালিক পাবে ৫০০০ শেয়ার×২০= ১ লাখ টাকা। বাকি সবাই পাবে ১৫০০০ শেয়ার ×২০ = ৩ লাখ টাকা। এটাকে বলা হয় লভ্যাংশ বা ডিভিডেন্ড। এটা সরাসরি একাউন্টে চলে যাবে। (ক্যাশ ডিভিডেন্ড দিলে, স্টক দিলে শেয়ারের সংখ্যা বাড়বে)

তাহলে ১০ টি শেয়ার সর্বশেষ ক্রয়কারি ডিভিডেন্ড পাবে ১০ শেয়ার ×২০= ২০০ টাকা। তার শেয়ারের প্রতিটির মূল দাম (ফেস ভ্যালু) কিন্তু ১০০ টাকাই আছে। আর সে ১০৭ টাকা করে কিনেছে, এটা মার্কেট ভ্যালু। এটা আরো কমতে বা বাড়তে পারে। 

তাহলে মূল জিনিসটা হলো, শেয়ার বাজারে আয় হয় দুই ভাবে। এক. কোম্পানি যে আয় করে সেটার লভ্যাংশ বা ডিভিডেন্ড দিলে। দুই. ক্রয়কৃত শেয়ার বিক্রি করে। 

ক্রয়কৃত শেয়ার বিক্রিটা মূলত কোম্পানির সুনাম, ব্যবসা ইত্যাদির উপর দাম উঠা-নামায় সম্পর্কিত হলেও এর সাথে সরাসরি কোম্পানির কোন সংযোগ নেই। শুধু এখানে কোম্পানির মালিকানা অদল-বদল হয়। অর্থ্যাৎ, একজন ব্যক্তি একটা কোম্পানির কিছু অংশের মালিক (দশ, বিশ বা পঞ্চাশটা শেয়ারের মালিক); সে এই মালিকানা আরেকজনের কাছে কিছু লাভে বা লসে বিক্রি করে দিল। 

এটাই শেয়ার মার্কেট। এখানে লাভ-লস খুব সাধারণভাবেই আসে। কোন অজানা জায়গা থেকে না।

আমি অনেক টেকনিক্যাল শব্দ ব্যবহার করিনি। জিনিসটা সহজ রাখতে চেয়েছি। 

সবার জন্য শুভকামনা। হ্যাপি লার্নিং 🙂

Share this Article:

Facebook
Twitter
LinkedIn